শাহ আরেফিন ও অদ্বৈত মহাপ্রভু মৈত্রী সেতু
৭ বছরেও শেষ হলো না সেতুর কাজ
- আপলোড সময় : ০৬-০৫-২০২৫ ০১:২৭:১৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-০৫-২০২৫ ০১:২৭:১৫ পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ::
যাদুকাটা নদীর ওপর নির্মাণাধীন শাহ আরেফিন ও অদ্বৈত মহাপ্রভু মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ ৭ বছরেও শেষ হয়নি। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন মানুষজন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর সংশ্লিষ্ট কর্তাদের গাফিলতির কারণে সড়কপথের সুফল পাচ্ছে না সুনামগঞ্জের চারটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ। এছাড়াও জেলার সবচেয়ে বড় এই সেতুকে কেন্দ্র করে তিনটি শুল্ক বন্দর ও কয়েকটি পর্যটন স্পটগুলোতে বেকারত্ব গুছাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের সুযোগ হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাদুকাটা নদীর ওপর শাহ আরেফিন (র.) ও অদ্বৈত মহাপ্রভু মৈত্রী সেতুর নির্মাণকাজ ৩০ মাসের মধ্যেই সম্পন্নের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ৭ বছরে সেতুটি নির্মাণের সময় বাড়ানো হয়েছে চার বার। তবুও কাজটি শেষ হয়নি।
তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের গড়কাটি ও বিন্নাকুলী গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যাদুকাটা নদীর ওপর নির্মাণাধীন ৭৫০মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন স্পট, তিনটি শুল্কবন্দরসহ চারটি উপজেলার যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের লক্ষ্যে এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলে সাধারণ মানুষ এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। এনিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ভারতের মেঘালয় পাহাড় আর তাহিরপুরের অপরূপ সৌন্দর্য্যরে যাদুকাটা নদীকে ঘিরে রয়েছে পর্যটন শিল্প। সেই শিল্পকে চাঙ্গা করতে, সীমান্ত এলাকায় তিনটি শুল্ক বন্দর, সীমান্ত সড়ক হয়ে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোণা-ঢাকার সড়ক যোগাযোগ এবং জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার লাখ লাখ মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার মাইলফলক সৃষ্টি হতো এই সেতু নির্মাণের ফলে। কিন্তু সেতুটির পূর্ব পাড়ের অংশে কাজ শেষ না করায় প্রান্তিক এই উপজেলার মানুষের স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে এসেও আলোর মুখ দেখছে না।
২০১৮ সালে ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় তমা কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। এরপর থেকে ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটির ৭৫টি গার্ডারের মধ্যে ৫৭টি এবং ১৫টি স্লাবের মধ্যে ১০টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ১৮টি গার্ডার ও ৫টি স্লাবের কাজ এখনও বাকি রয়ে গেছে ৭ বছর পরেও।
বিন্নাকুলী গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আলমসহ অনেকেই জানান, সেতুটি স¤পন্ন হলে আমাদের দুর্ভোগের পোহাতে হত না। অটোরিকশা না হয় সিএনজি চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারতাম। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। নৌকা দিয়ে নদী পার হতে ৩০মিনিট সময় লাগে। আর বর্ষার সময় আরও বেশি সময় লাগে। টাকাও খরচ হয়। নদী পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
বাদাঘাট বাজারের ব্যবসায়ী কবির ভূইয়া বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীগণ ঢাকা থেকে মালামাল কিনে সরাসরি বাজারগুলোতে নিয়ে আসতে পারছেন না সেতু না হওয়ার কারণে। এখন মালামাল পরিবহনে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। গত তিন বছর ধরে শেষ হবে বলে সময় পার করা হয়েছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
বাদাঘাট ইউনিয়নের বিশিষ্ট সমাজ সেবক আবুল হোসেন বলেন, সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, একই সাথে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের উপায় হবে। সবকিছুই এখন আটকে আছে সেতুটির কাজ শেষ না হওয়ায়।
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন জানান, সেতুর জন্য লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। গুরুত্ব দিয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ সম্পন্ন করলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। আর এই সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থার মাইলফলক সৃষ্টি করবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ম্যানেজার মোহাম্মদ নাসির বলেন, বার বার বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য কাজ শেষ করা যায়নি। তবে ২০২৬ সালের মে মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ